দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন
১১
এ সময়ে শুনি এক কঠোর সাধন।
সূর্যেতে সতত লগ্ন দুখানি নয়ন॥
কম্পাসের কাঁটা যেন সতত উত্তরে।
তেন অনিমিখ আঁখি সূর্যের উপরে॥
অবিরত ঘুরে দিনকর যেই দিকে।
যতক্ষণ নহে অস্ত উদয়ের থেকে॥
নিত্য নিত্য দিনত্রয় সাধনার পরে।
আঁখি-আবরণ আর আদতে না পড়ে॥
মুদিত কখন নহে দিনে রেতে খোলা।
বলিতেন প্রভু একি হৈল এক জ্বালা॥
ওমা শ্যামা দেখ, নাহি পড়ে আবরণ।
আঁখির সম্মুখে হয় অঙ্গুলি-চালন॥
তথাপি আঁখির ঢাকা কিছুই না পড়ে।
কি পীড়া হৈল বলি প্রভু চিন্তা করে॥
দেখিয়া শুনিয়া এত তবু কহে লোকে।
ভূতের ব্যাপার ভূতে পেয়েছে প্রভুকে॥
বালকস্বভাব তাঁর শিশুর মতন।
সহজে বিশ্বাস যাহা কহে লোকজন॥
আরোগ্যের হেতু যেন কথিত বিধান।
কুক্কুট-শৃগাল-বিষ্ঠা করেন আঘ্রাণ॥
শ্যামার মন্দিরে হেনকালে একদিন।
বসিয়া আছেন মুখ বিষণ্ণ মলিন॥
অকস্মাৎ উপনীত সাধু একজন।
মনোহর মূর্তিখানি বিশাল নয়ন॥
দেখিয়া তাঁহায় প্রভু করিলেন মনে।
জিজ্ঞাসিব কিবা পীড়া আঁখি-আবরণে॥
বলিবার অগ্রে কিবা কথা অতঃপর।
প্রভুর নিকটে সাধু নিজে অগ্রসর॥
বিস্তার করিয়া দুটি প্রফুল্ল নয়ন।
বিশেষিয়া প্রভুদেবে করে নিরীক্ষণ॥
প্রভুদেব বলিলেন পীড়ার ব্যাপার।
সাধু কয় এতো নয় বিয়াধি তোমার॥
লোচন-বিকার ইহা সাধনার ফলে।
স্বভাবস্থ হবে চক্ষু ঢাকা যাবে খুলে॥
মহা আনন্দিত প্রভু বচনে সাধুর।
বিষণ্ণতা আতুরতা সব দুঃখ দূর॥