দ্বিতীয় খণ্ড - অনুরাগে কালীদর্শন
১২
গোপনে সাধনা কেহ জানিতে না পায়।
জগৎ সুষুপ্ত যবে রেতের বেলায়॥
কিছুকাল পরে তবে হৃদু টের পান।
গভীর-রজনী-মধ্যে মামা যেথা যান॥
ঝোপ-জঙ্গলেতে পূর্ণ দেখে লাগে ত্রাস।
ভূত-প্রেত-শিবা-সর্পকুলের আবাস॥
পরদিনে বুঝাইতে বলেন হৃদয়।
মামা তব একি কর্ম? - উচিত না হয়॥
রাত্রিকালে ঝোপ-মধ্যে নিদ্রা নাই মোটে।
দেহে দিলে এত কষ্ট পড়িবে সঙ্কটে॥
শ্রীপ্রভুর এক লক্ষ্য লক্ষ্যে মন-প্রাণ।
কাজেই হৃদুর বাক্যে কেবা দিবে কান॥
শ্রীপ্রভুর মনে প্রাণে বহে এক ধারা।
যতদিন নাহি হয় কর্মের কিনারা॥
এখানে চিন্তায় হৃদু সতত অস্থির।
নিবারণ-হেতু এক করিল ফিকির॥
অন্তরীক্ষে দূরে থাকি ভয়-প্রদর্শনে।
ঢিল ছুঁড়ে নানাদিকে এখানে ওখানে॥
ব্যাপার বুঝিতে তাঁর দেরি নাহি হয়।
ভূত-প্রেত নহে ঢিল ছুঁড়িছে হৃদয়॥
নির্ভয় হৃদয়ালয় মগন ধিয়ানে।
চেষ্টা ব্যর্থ দেখি হৃদু চিন্তান্বিত মনে॥
মামার উপর তার আন্তরিক টান।
সুস্থির থাকিতে নারে কাঁদে মন-প্রাণ॥
একদিন রেতে হৃদু সাধনার স্থানে।
মমতার টানে যায় পণ করি প্রাণে॥
দূর থেকে দেখিলেন তথা গুণমণি।
ভাব-ধরনের কথা অপূর্ব কাহিনী॥
পরিত্যক্ত-যজ্ঞসূত্র বিহীন-বসন।
একমনে মহাধ্যানে আছেন মগন॥
কাছে যেতে ভয় মাত্র টানের সাহসে।
ধীরগতিপদে হৃদু জঙ্গলে প্রবেশে॥
মনে মনে করে মামা এসেছে কোথায়।
বার বার ডাক দিয়া প্রভুরে জাগায়॥
বলে মামা একি তব কর্ম গরহিত।
উলঙ্গ অঙ্গেতে নাই যজ্ঞ-উপবীত॥
নিবিড় আঁধার স্থান গভীর রজনী।
চৌদিকে কতক দূর নাহি জনপ্রাণী॥
বুঝিতে না পারি মর্ম কার্যের কৌশল।
সত্য সত্য মামা তুমি হলে কি পাগল॥
ধীরে ধীরে কৈলা প্রভু হৃদয়ে উত্তর।
ধিয়ানের পক্ষে স্থান বড়ই সুন্দর॥
একে গঙ্গাতীর তাহে আমলকী-তলা।
জগৎ নীরব এবে সুষুপ্তির বেলা॥
বস্ত্র-যজ্ঞসূত্র আমি রাখিব কেমনে।
দারুণ বন্ধন দুই মায়ের ধিয়ানে॥
তুমি নাহি জান হৃদু শাস্ত্রেতে কথিত।
পাশযুক্তে ধ্যানসিদ্ধ নহে কদাচিত॥
যাইবার কালে দুই পরিব আবার।
হৃদয় বিস্ময়ে শুনে বচন মামার॥