Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা

তন্ত্রমতে ক্রিয়াকাণ্ড সাধন-ভজনা।
করিবারে শ্রীপ্রভুর একান্ত বাসনা॥
রঙ্গ দেখি ভঙ্গ দিল দীক্ষাগুরু তাঁর।
কে করে এখন তন্ত্র-সাধনা যোগাড়॥
তান্ত্রিক সাধক যত ছিল যে যেখানে।
জুটে সবে এ সময় প্রভু-সন্নিধানে॥
দেখাইয়া দেন প্রভু তে সবারে পথ।
অনতিবিলম্বে যাহে পূরে মনোরথ॥
সাধনা-যোগাড় শ্রীপ্রভুর সোজা নয়।
যে কোন মানুষ হ'তে কখন না হয়॥
যোগাড়ে সাহায্য-হেতু অদ্ভুত কাহিনী।
আসিয়া জুটিল এক অদ্ভুত ব্রাহ্মণী॥
একদিন দেখিলেন প্রভু লক্ষ্য করি।
সুরধুনীকূলে বসি আছে এক নারী॥
হৃদয়ে বলিলা প্রভু ডাকিবারে তায়।
হৃদুর হৃদয় অতি বিস্ময় ইহায়॥
আকাশ-পাতাল হৃদু ভাবে অনিবার।
কামিনী নরক-কৃমি গিয়ান যাঁহার॥
কেন তিনি অকস্মাৎ ডাকেন কামিনী।
যেমন মানুষ-বুদ্ধি সন্দেহ অমনি॥
ভাবিয়া চিন্তিয়া হৃদু গিয়া সন্নিধানে।
কূলে উপবিষ্টা নারী ডাক দিয়া আনে॥
কেবা নারী শুন মন সংক্ষেপ আখ্যান।
ব্রাহ্মণনন্দিনী পূর্বদেশে জন্মস্থান॥
জন্মাবধি সাধ কিসে ভগবান মিলে।
দেহে নাই মন হরিচরণকমলে॥
নিদ্রাযোগে একদিন স্বপনেতে হেরে।
পরম পুরুষ এক সুরধুনীতীরে॥
চমকি উঠিয়া চিন্তা করে অনুক্ষণ।
কি করিয়া হয় স্বপ্নদৃষ্ট-দরশন॥
কুল-শীল-লাজ-ভয় বিসর্জন দিয়ে।
অন্বেষণ করে তাঁর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে॥
দিবস-যামিনী ভ্রাম্যমাণা নিরন্তর।
শুভদিনে উপনীত দক্ষিণশহর॥
আপন চিন্তায় মগ্ন ঘাটে বসি ছিল।
প্রভুর আজ্ঞায় হৃদু ডাকিয়া আনিল॥
পুলকে পূর্ণিত তনু গদগদ স্বরে।
মা বলিয়া প্রভুদেব সম্বোধিলা তাঁরে॥
এ নহে সামান্যা নারী বহু-গুণাকর।
যেমন উপরে বাহ্য তেমতি ভিতর॥
শ্রীহরিচরণ-আশে ত্যাগী সন্ন্যাসিনী।
সাধন-ভজন কত করেছেন তিনি॥
দেবভাষা-বিশারদা বিশেষ প্রকারে।
সুগূঢ় শাস্ত্রের বাক্য ভাল ব্যাখ্যা করে॥
তত্ত্বান্বেষী একজন বৈষ্ণবচরণ।
প্রসিদ্ধ পণ্ডিত পড়া শাস্ত্র অগণন॥
পরাজয় মানে তাঁর পরিচয় পেয়ে।
কে দেখেছে কে শুনেছে হেনরূপ মেয়ে॥
লিখিতে তাঁহার কথা কি আছে শকতি।
প্রভু বলিতেন চারিবেদ মূর্তিমতী॥
তন্ত্র-গীতা-পুরাণাদি ভক্তি-গ্রন্থ যত।
অক্ষর অক্ষর তাঁর সব কণ্ঠস্থিত॥
ব্রাহ্মণী তাঁহার আখ্যা হৈল এইখানে।
সে হেতু ব্রাহ্মণী বলি সকলেই জানে॥
বিস্ময়-আনন্দ-সহ কহিল ব্রাহ্মণী।
তোমায় দেখেছি বাবা স্বপনেতে আমি॥
বিভোর বাৎসল্যভাবে করে নিরীক্ষণ।
যেন প্রভুদেব তাঁর আপন নন্দন॥
প্রভুও বালকবৎ দেন পরিচয়।
অবস্থা-ভাবের কথা যে রকম হয়॥
শাস্ত্রমতে মিলাইয়া দেখি একে একে।
মহাভাবাবস্থাগত বুঝিল প্রভুকে॥
মানুষে সম্ভব নহে হেন মহাভাব।
হয় মাত্র নরহরি-অঙ্গে আবির্ভাব॥
অবাকে ব্রাহ্মণী করে প্রভুকে দর্শন।
বিরাজে শ্রীঅঙ্গে স্পষ্ট গৌরাঙ্গ-লক্ষণ॥
ছিল এক শালগ্রাম ব্রাহ্মণীর ঠাঁই।
অন্তরে জানিলা প্রভু জগৎ-গোসাঁই॥

Prev | Up | Next


Go to top