দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা
৪
অগ্রে দিয়া ভোগ-রাগ পশ্চাৎ ব্রাহ্মণী।
প্রসাদ পাইয়া তবে খান অন্নপানি॥
হয়েছে ভোগের বেলা প্রভু তেকারণ।
ভাগিনা হৃদয়ে ডাকি বলিলা বচন॥
মনের মতন সিধা দেহ আনাইয়া।
সঙ্গে আছে শালগ্রাম তাঁহার লাগিয়া॥
পঞ্চবটতলে তবে সিদা লয়ে যায়।
ভোগহেতু ডাল-লুচি ত্বরিতে বনায়॥
কি জানি কি ভাবে তাঁর ঝুরে দুনয়ন।
ভোগের কারণ লুচি বনায় যখন॥
নিবেদন করে যবে মুদি দুটি আঁখি।
ভোগসহ শালগ্রাম সম্মুখেতে রাখি॥
এমন সময় প্রভুদেব ভগবান।
চুপে চুপে গিয়া দুই হাতে লুচি খান॥
ব্রাহ্মণী খুলিয়া আঁখি যে সময় চায়।
প্রভুর স্বরূপ অঙ্গে দেখিবারে পায়॥
তায় খান দত্ত ভোগ শ্রীমুখকমলে।
ধেয়া ধেয়া নাচে মাগী পঞ্চবটতলে॥
ধিয়ানে দেখিনু যাঁরে পাইলাম তাঁয়।
এত বলি শালগ্রাম ফেলিল গঙ্গায়॥
আনন্দের সীমা নাই তাঁহার অন্তরে।
হেরিয়া দুর্লভ ধন প্রত্যক্ষগোচরে॥
যাঁর জন্য ত্যাজিয়াছে আত্মীয়-স্বজন।
সহি শীত তাপ কৈলা বিস্তর সাধন॥
ভবসুখে জলাঞ্জলি দিয়া যাঁর তরে।
ক্ষুধাতৃষ্ণাতুরা অনাথিনী-সম ঘুরে॥
সর্বস্ব রতন যাঁরে করিয়া সিদ্ধান্ত।
অন্বেষণে ঘাঁটিয়াছে পুরাণাদি তন্ত্র॥
অর্জন-উপায় ভাবি সাধন-ভজন।
কত করে অনাহারে না যায় বর্ণন॥
আঁখি-বারি অনিবার সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস।
দারুণ যন্ত্রণা বাক্যে না হয় প্রকাশ॥
বিষম মরমভেদী হতাশ তাড়না।
মুহূর্তে মুহূর্তে হৃদে শেলের বেদনা॥
অকাতরে সহিয়াছে সে কোমল প্রাণে।
দিয়া পাতি নিজ ছাতি ভবের তুফানে॥
এ হেন সাগরছেঁচা নিধি পেলে করে।
যে সুখ উদয়ে তাহা কে বর্ণিতে পারে॥
আনন্দে উন্মত্তা-প্রায় ব্রাহ্মণী এখন।
বাৎসল্যে হৃদয় ভরা চাহে ঘনে ঘন॥
দেখিবারে শ্রীপ্রভুর শ্রীমুখকমল।
সাধে বাদী হৈল নিজ নয়নের জল॥