Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা

ভক্তিমুখী ব্রাহ্মণী ভক্তির আচরণ।
অবিরত ভক্তিশাস্ত্র করে অধ্যয়ন॥
একদিন সমাসীন প্রভুর গোচরে।
অনুরাগে ভক্তিগ্রন্থ পড়ে ভক্তিভরে॥
যথা অষ্টসাত্ত্বিক ভাবের বিবরণ।
নানাবিধ অশ্রু-আদি পুলক-কম্পন॥
যবে যে ভাবের কথা পড়েন ব্রাহ্মণী।
প্রভুর শ্রীঅঙ্গে তাহা উদয় তখনি॥
পড়ে গ্রন্থ আর প্রভু-অঙ্গ-পানে চায়।
বর্ণিত প্রত্যক্ষ দুঁয়ে একত্রে মিলায়॥
করতালি দিয়া মাগী নেচে নেচে বলে।
এইতো গৌরাঙ্গদেব নিতায়ের খোলে॥
হৃদয় আনন্দময় তাহার উচ্ছ্বাসে।
যথা তথা পুরীমধ্যে এই বার্তা ঘোষে॥
এই রামকৃষ্ণ সেই গৌর গুণধাম।
সাব্যস্তে সহস্র দেয় শাস্ত্রের প্রমাণ॥
প্রমাণ খণ্ডিতে কেহ নারে ধীরগণে।
তথাপি বিশ্বাস কার নাহি হয় মনে॥
মথুর বলেন ইহা কথা কি প্রকার।
বার বিনা নাহি শুনি আর অবতার॥
তবে এ স্বীকার্য কথা মানি শিরোপরে।
কালীর হয়েছে কৃপা তাঁহার উপরে॥
অদ্যাবধি ভাব কিবা ভাব কারে বলে।
কি ভাবে এমন ভাব কার অঙ্গে ফলে॥
কি ভাবের নাম কিবা কি তার লক্ষণ।
এখানে বিদিত নাহি ছিল কোনজন॥
হইত প্রভুর অঙ্গে ভাব আগাগোড়া।
কেহ বা বায়ুর কর্ম কেহ কয় পীড়া॥
কেহ বলে ভূতে পেলে হয় এ প্রকার।
কেহ বলে উন্মত্ততা মাথার বিকার॥
যে বড় উন্নত আত্মা এইটুকু গায়।
এমত অবস্থা তাঁর কালীর কৃপায়॥
মথুর আমোদপ্রিয় বড়লোক কিনা।
কৌতুক-রহস্য-কাজে খুশী ষোল আনা॥
সবিস্ময়ে মনে চিন্তা করে অনুক্ষণ।
মানুষে ঈশ্বরাবেশ একথা কেমন॥
কিছুই না পারি আমি করিবারে স্থির।
অকথ্য অবোধ্য তত্ত্ব অতীত বুদ্ধির॥
সত্য কি এ মিথ্যা তত্ত্ব করিতে নিশ্চয়।
জন্মিল অন্তরে তার আগ্রহাতিশয়॥
প্রভুও নাছোড়বান্দা কন বারে বারে।
সাধক শাস্ত্রজ্ঞ আনি সভা করিবারে॥
মথুর স্বীকার করি কৈল আয়োজন।
যথাদিনে উপনীত পণ্ডিত-সজ্জন॥
বৈষ্ণবচরণ তার মধ্যে একজনা।
বৈষ্ণবসমাজ-মধ্যে অতি খ্যাতনামা॥
গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণে মহামান্য করে।
বিচারে মীমাংসা যাহা নতশিরে ধরে॥
এখানেতে পুরীমধ্যে পাচক-পূজারী।
মথুরের দলবল যত কর্মচারী॥
গণ্যমান্য নিকটের সবে সমুৎসুক।
কুতূহলী দেখিবারে রহস্য কৌতুক॥
তুলিয়া প্রসঙ্গ আগে বলিলা ব্রাহ্মণী।
দেখাশুনা শ্রীপ্রভুর যাবৎ কাহিনী॥
অনুভূতি-দর্শনাদি যোগজ বিকার।
ভাবাবেশ সমাধ্যাদি প্রকৃতি-আচার॥
রাগাত্মিকা ভক্তি মহাভাবের লক্ষণ।
ভক্তিশাস্ত্র-গ্রন্থে আছে যেরূপ লিখন॥
মহাভাবস্বরূপিণী ব্রজে শ্রীরাধার।
আর নবদ্বীপচন্দ্র গৌরাঙ্গ-অবতার॥
এ দুঁহার অঙ্গে মহাভাবের উদয়।
ভক্তিগ্রন্থে লক্ষণাদি তার যেন কয়॥
সেই সব সুপ্রকাশ প্রভুর শরীরে।
তাই অবতার-তনু বাখানি তাঁহারে॥
আসুন বিচার-রণে থাকে কেহ যদি।
খণ্ডিব তাঁহার তর্ক হইলে বিরোধী॥
এত বলি তপস্বিনী ব্রাহ্মণী বাখানে।
একত্রিত সমবেত সভাবিদ্যমানে॥
বিপন্ন সন্তানে রক্ষা করিতে জননী।
এখানেতে সেই ভাব ধরিল ব্রাহ্মণী॥
ওজস্বিনী ব্রাহ্মণীর আমূল বর্ণন।
একমনে শুনিলেন বৈষ্ণবচরণ॥
শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত তেঁহ ঘটে বহু গুণ।
সত্যতত্ত্বান্বেষী তায় সাধনানিপুণ॥
সাধনাজ সূক্ষ্মদৃষ্টিবল-সহকারে।
প্রভুরে দেখিয়া কয় সভার ভিতরে॥
ধীরে ধীরে সুপণ্ডিত বৈষ্ণবচরণ।
প্রসঙ্গ-বিচারে নাহি দেখি প্রয়োজন॥
শ্রীঅঙ্গে শাস্ত্রের লিপি দেখিবারে পাই।
ব্রাহ্মণী বলেন যাহা আমি বলি তাই॥
বালকস্বভাব প্রভু আনন্দ অন্তরে।
হাসিতে হাসিতে কন বিস্মিত মথুরে॥
কি কহে পণ্ডিত আমি কিছুই না জানি।
শুনিয়া শীতল কিন্তু হইল পরাণী॥
মনে করেছিনু আমি বিয়াধি আমার।
অসাধ্য নিদান নাহি জানে প্রতিকার॥
সভামধ্যে বিদ্যমান আছিলেন যাঁরা।
স্তম্ভিত বিস্মিত সবে বাক্বুদ্ধিহারা॥
আজিকার সভাভঙ্গ হইল এখানে।
চলিয়া গেলেন বাস যার যেইখানে॥
কাছে বিকশিত পুষ্প মধুকোষে পূর্ণ।
কেহ না জানিতে পারে মধুকর ভিন্ন॥
প্রভুদেবে দেখি আজি বৈষ্ণবচরণ।
সত্যতত্ত্বান্বেষী কিনা মহানন্দ মন॥
কর্তাভজা-সম্প্রদায়ভুক্ত বর্তমানে।
বুঝিল পাইবে পথ প্রভু-সন্নিধানে॥
কৃপা-পরশনে হয় শক্তির সঞ্চার।
যাহাতে সহজে সিদ্ধ ফল সাধনার॥
এত জানি আপনার দলবল লয়ে।
প্রভু-দরশনে আসে সময়ে সময়ে॥
পরম পণ্ডিত তেঁহ তাঁহার স্বীকারে।
অন্য কেহ প্রতিবাদ করিতে না পারে॥

Prev | Up | Next


Go to top