Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা

রানীর জামাতামধ্যে মথুরামোহন।
নানা গুণে বিভূষিত বুদ্ধি বিচক্ষণ॥
তাই রানী জামাতায় সুযোগ্য দেখিয়ে।
বিষয়-ব্যবসা-কর্ম দিল সমর্পিয়ে॥
বিপুল সম্পত্তি জমিদারি কারবার।
রক্ষণাবেক্ষণ-পর্যালোচনার ভার॥
কার্যতঃ মথুর এবে সম্পত্ত্যধিকারী।
আজ্ঞাবহ দাস-দাসী যত কর্মচারী॥
ধনের অভাব নাই বহু ধন ঘরে।
কাঞ্চনাকর্ষণ কিবা অজ্ঞাত অন্তরে॥
কামিনীর আকর্ষণ বুঝে ষোল আনা।
বুদ্ধিভ্রষ্ট কর্মনষ্ট যদিও ঘটে না॥
প্রারম্ভযৌবন প্রভু রূপ অঙ্গে ভরা।
সুবলন সুগঠন সুন্দর চেহারা॥
একবারে কামবিরহিত কায়া কিনা।
জানিতে বৃত্তান্ত হৈল একান্ত কামনা॥
স্ত্রীমাত্রে জননী জ্ঞান শ্রীপ্রভুর মনে।
আগাগোড়া শ্ৰীমথুর বিশেষিয়ে জানে॥
দেখিছে উজ্জ্বলোপমা হাজার হাজার।
তথাপি না যায় সন্দ তামস-আঁধার॥
পরীক্ষার হেতু যুক্তি কৈল মনে মনে।
রূপসী যুবতী এক বেশ্যা-সংযোটনে॥
এ বাজারে কে কেমন কার কোথা থানা।
রসজ্ঞ শ্রীমথুরের বিশেষিয়ে জানা॥
লছমন বাঈ বেশ্যা অতি রূপবতী।
যোগীরে টলায় রূপে এতেক শকতি॥
একে তো জাতিতে মোহনত্ব ষোল কলা।
তদুপরি বেশ্যাবৃত্তি ব্যবসাকৌশলা॥
তার সঙ্গে মথুরের হইল মন্ত্রণা।
সে যেমন তরতম আর ষোল জনা॥
একত্রিত রাখিবারে তাহার ভবনে।
প্রভুকে জোটনা করি দিবেন সেখানে॥
ভাঙিয়া প্রভুর কথা সবিশেষ কয়।
তেজোজ্জ্বল ব্রহ্মচারী ব্রাহ্মণতনয়॥
উত্তরে মথুরে কয় কুহকী মোহিনী।
বড় বড় রথী টলে এ তো তুচ্ছ গণি॥
যথাদিনে সুরঙ্গিনী কিছু নাহি বাদ।
পাতিল ভবনমধ্যে যত ছিল ফাঁদ॥
ল'য়ে অকলঙ্ক চাঁদ প্রভু ভগবানে।
সান্ধ্যভ্রমণের হেতু তুলিল ফেটিনে॥
মথুর করিল যাত্রা গড়-অভিমুখে।
পথের দুপাশে লোক দাঁড়াইয়া দেখে॥
একে মথুরের গাড়ি তাহে সুসজ্জিত।
উচ্চৈঃশ্রবাসম জোড়া অশ্ব সংযোজিত॥
শোভার কব কি কথা নাহি যায় ইতি।
ছুটিল উদ্দেশ্য-পথে পবনের গতি॥
মিনিটে এড়ায় আধ ঘণ্টাকের পথ।
চক্রপাণি-সঙ্গে যেন অর্জুনের রথ॥
বিশাল গড়ের মাঠ চারি দিক খোলা।
শীতল গাঙ্গেয় বায়ু রঙ্গে করে খেলা॥
সেবনে অশেষ তৃপ্তি মনের উল্লাস।
সময় বুঝিয়া ফিরে মথুর বিশ্বাস॥
শ্রীপ্রভু অন্তরযামী বুঝিয়া অন্তরে।
পরীক্ষায় সুপ্রস্তুত ভকতের তরে॥
ভকতবৎসল তিনি ভক্ত তাঁর প্রাণ।
যথা তথা ভক্তসঙ্গে রহে বিদ্যমান॥
শ্মশানে মশানে কিবা অকূল পাথারে।
জনশূন্য মরু কিবা হিমানী-আগারে॥
স্থানাস্থান-কালাকাল-বিচার-বিহীনে।
সম্পদ বিপদ সখা সঙ্গে রেতে দিনে॥
কখন অদৃশ্যভাবে নয়নাগোচর।
কখন প্রত্যক্ষরূপে আঁখির উপর॥
এবে পুণ্যময়ী বঙ্গে নব কলেবরে।
লীলাপ্রিয় লীলাপর লীলার আসরে॥
আজি দিন পরীক্ষার ভক্তের সহিত।
লীলাছলে বেশ্যাগারে নিজে উপনীত॥
প্রবেশিয়া দিয়া তাঁয় ভবন-ভিতরে।
কৌশল করিয়া নিজে গেল স্থানান্তরে॥
ভবনের সজ্জা কিবা দিব পরিচয়।
দেবরাজ বাসবের যেন নৃত্যালয়॥
রূপসী সতের জনা ভূষিতালঙ্কারে।
দীপের আলোকে অঙ্গ ঝলমল করে॥
দেখিয়া চাঁদের মালা চক্ষের উপর।
প্রভুর শ্রীঅঙ্গে হয় আবেশের ভর॥
খসিল কটির বাস দিগম্বর তনু।
রূপোজ্জ্বল কলেবর যেন বাল-ভানু॥
মোহিনী-মোহিত কণ্ঠে শ্যামা-গুণ-গান।
ভাবে স্বরে তালে লয়ে সর্বাঙ্গে সমান॥
সুগায়িকা বেশ্যাগণ স্তব্ধ গীত শুনি।
বেদের বাঁশীর স্বরে যেমন নাগিনী॥
এদিকে কি চিত্র দেখ ভরিয়ে নয়ন।
নবীন নবীন বয়ঃ প্রারম্ভযৌবন॥
কাঞ্চন-বরণ অঙ্গে কান্তি সমুজ্জ্বল।
লাবণ্য সৌন্দর্যমাখা শ্রীমুখমণ্ডল॥
ঈষৎ বঙ্কিম আঁখি বাল্যভাবে ভরা।
নিরুপম আঁখি-রাজ্যে আঁখির চেহারা॥
তুলির না হয় শক্তি আঁকিতে সে ঠাম।
ভাণ্ডারে অভাব বর্ণ নিজে বিধি বাম॥
ঈষৎ রক্তিমাধর অতি সুশোভিত।
তাম্বুলের রাগে যেন স্বতই রঞ্জিত॥
আছে কিবা তুলনা দিতে গঠন গ্রীবার।
বেণু বীণা পিক জিনি স্বরের দুয়ার॥
সুবিশাল বক্ষঃস্থল জানু মনোহর।
কুর্মাঙ্গের ন্যায় লিঙ্গ দেহের ভিতর॥
কোমলত্বে পরাজিত কমলের দল।
প্রভুর চরণপদ্ম এতই কোমল॥
উঠে দিব্য পরিমল পরশ যেখানে।
বিভোর যাহাতে এবে যত বেশ্যাগণে॥
দিব্যভাবে বেশ্যাগণ জাতিবুদ্ধিহারা।
আঁকিতে নারিনু আজি চিত্রের চেহারা॥
কেন তথা একত্রিতা কিবা প্রয়োজন।
কি কর্মসাধনে মর্ম নাহিক স্মরণ॥
বিশ্ববিমোহন মেয়ে মায়ার মূরতি।
যোগেশের যোগ ভাঙে এতেক শকতি॥
তায় হেথা বেশ্যা এরা শুধু পেঁচ ঘটে।
মানুষে বানায় মেষ কৌশলের চোটে॥
আজি কিন্তু বুদ্ধিহারা মোহিনীর গণ।
রামকৃষ্ণলীলা-কথা বিচিত্র কথন॥
সর্বমনোহর প্রভু মোহন আধার।
ধীরে ধীরে শুন মন কই সমাচার॥
শ্যামা-গীত গাইতে গাইতে শ্রীপ্রভুর।
গভীরসমাধিগত বাহ্য গেল দূর॥
অশ্রুত অদৃষ্টপূর্ব ব্যাপার দেখিয়ে।
সশঙ্কিত-চিত যত বারাঙ্গনা মেয়ে॥
মূর্ছাগত দেখি যেন নিজের সন্তান।
স্নেহময়ী জননীর আকুল পরাণ॥
সেই মত হইল যত বারাঙ্গনাগণে।
সুশীতলজল কেহ সিঞ্চে শ্রীবদনে॥
কেহ বা ব্যজন করে ব্যাকুলা হইয়ে।
বুদ্ধিশূন্যে অন্যে কেহ ডাকে ফুকুরিয়ে॥
মথুর শুনিয়া গোল আইল ত্বরায়।
আসিলে কিঞ্চিৎ বাহ্য ফেটিনে উঠায়॥
বেগবান অশ্বে যোতা মথুরের গাড়ি।
উতরিল পুরীমধ্যে অতি ত্বরা করি॥

Prev | Up | Next


Go to top