দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা
১০
এখানে কি কহে কথা শুনহ ব্রাহ্মণী।
একমুখে শত মুখ ধরিয়া আপুনি॥
প্রভুর কাহিনী গায় সবার গোচরে।
শ্রীগৌরাঙ্গ রামকৃষ্ণ অপর আধারে॥
একি বিপরীত কথা ব্রাহ্মণী বাখানে।
প্রভু অন্যরূপে গোরা না কহিল কেনে॥
প্রভু সকলের মূল এইমাত্র জানি।
কৃষ্ণ রাম গোরা তাঁর অবতার গণি॥
নর-রূপে অবতার যথায় যা হয়।
শ্রীপ্রভুর রূপান্তর বুঝিবে নিশ্চয়॥
রূপান্তর-অবতারে পূজা-সেবা করি।
রামকৃষ্ণ-রূপ-মাত্র হৃদয়েতে ধরি॥
প্রভু ব্রহ্ম সনাতন সকলের মূল।
নিরাকার সাকার সর্বজ্ঞ সূক্ষ্ম স্থূল॥
অযোধ্যায় প্রভু রাম শ্যাম বৃন্দাবনে।
হিমাচলে দেবদেব গোরা নদে-ধামে॥
নির্গুণ নিষ্ক্রিয় প্রভু বেদান্তেতে বলে।
শক্তি নামে শাক্তগণ গায় কুতূহলে॥
বুদ্ধ বলি বৌদ্ধগণ প্রভুরে বাখানে।
খ্রীষ্টানে যীশু গায় আল্লা মুসলমানে॥
যে রূপে যে নামে যেবা উদ্দেশি ঈশ্বরে।
স্মরণ মনন কিংবা সংকীর্তন করে॥
ভজে পূজে রামকৃষ্ণ এই মনে করি।
দয়াল ঠাকুর মোর ভবের কাণ্ডারী॥
দেবীমোড়লের ঘাট পুরীর অদূরে।
তাহার নিকটে বাসা দিলা ব্রাহ্মণীরে॥
গোটা দিন পুরীমধ্যে কাটান ব্রাহ্মণী।
বাসায় চলিয়া যান আইলে যামিনী॥
অতি রূপবতী তেঁহ বয়স্কা এখন।
বুঝে উচ্চবংশে জন্ম যে করে দর্শন॥
সুন্দর গড়ন অঙ্গে কনক-বরণা।
পবিত্র মুখের ভাব গেরুয়া-বসনা॥
অতি দীর্ঘ দীর্ঘ চুল পড়েছে এলায়ে।
অযতনে ধূলা কুটি কত কি লাগিয়ে॥
সন্নিকটে প্ৰতিবাসী যত চারিধারে।
আদর করিয়া তায় লয়ে যায় ঘরে॥
যত্ন করে অন্তঃপুরে রমণীর গণ।
ভক্তিভরা প্রভুকথা করেন শ্রবণ॥
কিবা ধন প্রভুদেব কি চরিত তাঁর।
এবে নররূপধারী হরি অবতার॥
ভক্তিভরে নমস্কারে কিবা ফলে ফল।
বারেক দর্শনে করে চিত নিরমল॥
পেলে অণুকণা কৃপা জীবে কিবা পায়।
ব্রাহ্মণী উন্মত্তা হয়ে প্রভু-গুণ গায়॥
ধরে পায় ব্রাহ্মণীর রমণীর গণ।
কি উপায়ে করে তারা প্রভুরে দর্শন॥
দরশনলুব্ধমনা দেখি বামাদলে।
ঊষায় আনিত সঙ্গে গঙ্গাস্নান-ছলে॥
এইরূপে ঘরে ঘরে পাড়ায় পাড়ায়।
ব্রাহ্মণী রমণীমন মজিয়া বেড়ায়॥
মন দিয়া শুনিবারে যদি কর হেলা।
বুঝিতে নারিবে মন শ্রীপ্রভুর লীলা॥
গিরিপদে বিন্দু বিন্দু মাত্র ঝরে জল।
প্রণালী-আকার পরে ক্ৰমশঃ প্রবল॥
তৃণ ভাসে হেন স্রোত নাহিক প্রথমে।
বলবতী স্রোতস্বতী সাগরসঙ্গমে॥
তেমনি বুঝিবে মন কার্য শ্রীপ্রভুর।
সামান্য ধরিয়া উঠে যায় কত দূর॥