Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা

১১

পাইয়া শ্রীমথুরের পত্র-নিমন্ত্রণ।
পুরীমধ্যে উপনীত হৈল একজন॥
বহু বহু শাস্ত্র-পাঠে পণ্ডিত-প্রবর।
ব্রাহ্মণের কুলে জন্ম ইন্দেশেতে ঘর॥
কাছে কিবা দূরে বৈঠে যতেক পণ্ডিত।
সকলের মধ্যে তাঁর নাম সুবিদিত॥
দিগ্বিজয়ী বিচারেতে সাধ্য টেকে কার।
এমত আছিল তাহে শক্তি অম্বিকার॥
তান্ত্রিক সাধক বল এত গায়ে ধরে।
বাণী-পুত্র যদি তবু না পারে বিচারে॥
সিদ্ধাইসম্ভূত শক্তি যেন তেন নয়।
অসাধ্যকে সাধ্য করে নয়ে করে ছয়॥
বীরাচারী বীরভাব বীরমদে ভরা।
বীরত্ব-প্রকাশ প্রিয় স্বভাবের ধারা॥
চলনে ধরনে হেন যেন মহাবীর।
জীবনে না জানে করিবারে নতশির॥
গম্ভীর সিদ্ধাই-রব হেরে রে রে রে রে।
দেবীস্তোত্র এক পদ তৎসহকারে॥
যথায় উচ্চারে শব্দ কানে শুনে যারা।
তখনি তাহারা হয় বলবুদ্ধি-হারা॥
বলহারী বীরাচারী সিদ্ধাই ব্রাহ্মণ।
শক্তিতে অন্যের করে বলের হরণ॥
অত্যাশ্চর্য তান্ত্রিকের বীরত্ব-কাহিনী।
দর্শন দূরের কথা কানেও না শুনি॥
নিত্যপূজা অম্বিকার সমাপন-পরে।
সাজায় মণেক কাষ্ঠ হাতের উপরে॥
করিবারে হোম-কার্য সহ-দেবীস্তুতি।
বামহাতে জ্বালে কাঠ দক্ষিণে আহুতি॥
অম্বিকা-সেবক তেঁহ অম্বিকা ভরসা।
সময় আগত তাই এইখানে আসা॥
এখন প্রভুর কথা সর্বথাই চলে।
হুলস্থুল পড়িয়াছে ব্রাহ্মণীর বোলে॥
তান্ত্রিক করিল মনে শুনিয়া বারতা।
যে হউন তিনি তাঁর হরিব ক্ষমতা॥
বাহু তালি রে রে বুলি তুলিয়া তান্ত্রিক।
চলিল আছেন যেথা প্রভু অমায়িক॥
গোচরে পাইয়া তারে প্রভু গুণমণি।
করিলেন উচ্চতর রে রে রে রে ধ্বনি॥
ততোধিক উচ্চরব করে দ্বিজবর।
উচ্চতম রে রে রবে প্রভুর উত্তর॥
পুনঃ দ্বিজ কৈল শব্দ জলদ-গম্ভীর।
প্রভুর উঠিল রব শ্রবণ-বধির॥
পরাজিত হ'য়ে রবে বসিল ব্রাহ্মণ।
বিস্ময়-স্তম্ভিতভাবে মলিন-বদন॥
সিদ্ধায়ের বল নষ্ট হৈল এত দিনে।
পণ্ডিত-সমাজে খ্যাতি যাহার কারণে॥
শ্রীপ্রভু দয়ার সিন্ধু করুণা-নিদান।
সিদ্ধাই-অনর্থ হরি সাধিলা কল্যাণ॥
সিদ্ধায়ে সাধকে রাখে হানা দিয়া পথে।
ঈশ্বরের দরশনে নাহি দেয় যেতে॥
বিঘ্ন দূর শ্রীপ্রভুর কৃপায় এখন।
রেতে-দিনে প্রভুদেবে করে দরশন॥
কি জানি দেখিয়া কিবা কহে একদিন।
আশ্রিত শরণাগত আমি দীনহীন॥
আপুনি পরমব্রহ্ম এবে অবতার।
কৃপা করি কর মুক্ত নয়ন-আঁধার॥
শ্রীপ্রভু বলেন ওহে তান্ত্রিক ব্রাহ্মণ।
আমাতে এখন তুমি কি পেলে লক্ষণ॥
অন্য পণ্ডিতের সঙ্গে করিয়া বিচার।
সাব্যস্ত করিতে হবে সিদ্ধান্ত তোমার॥
এত বলি প্রভুদেব কহিলা মথুরে।
বৈষ্ণবচরণে লিখ শীঘ্র আসিবারে॥

Prev | Up | Next


Go to top