দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা
১৪
শুন সাধনার কথা তান্ত্রিক আচারে।
ভীষণ সাধনা এই সাধনা সংসারে॥
যখন যে কাজে হয় শ্রীপ্রভুর মন।
তখন তাহাতে হয় যাহা প্রয়োজন।
আপনি জুটিয়া আসে তাঁর সন্নিধানে।
শশব্যস্ত সৃষ্টি যেন শ্রীআজ্ঞা-পালনে॥
রামকৃষ্ণলীলা-কথা মধুর কাহিনী।
সমাগতা সময়েতে সাধিকা ব্রাহ্মণী॥
তন্ত্রমতে যাবতীয় ভজন-সাধনা।
সুকৌশলা ব্রাহ্মণীর বিশেষিয়া জানা॥
নিরুপমা দেবীরূপে বিধাতার গড়া।
প্রভুতে বাৎসল্যভাব সন্তানের বাড়া॥
ছানা-মাখনাদি-মিষ্টি মাগিয়া ভিক্ষায়।
আনিয়া আপন হাতে প্রভুকে খাওয়ায়॥
সখ্য-বাৎসল্যাদি পঞ্চভাব সুমধুর।
ঈশ্বরের ঈশ্বরত্ব যাহে করে দূর॥
সর্বশক্তিমান বিভু পরম ঈশ্বরে।
বসায় আত্মীয়বৎ কোলের উপরে॥
ব্রাহ্মণী ভুলিয়া গেছে ঐশ্বর্য এখন।
মধুর বাৎসল্য-রসে মগ্ন প্রাণমন॥
তান্ত্রিক-সাধনে হয় পরম মঙ্গল।
এই জ্ঞান সাধিকার হৃদে সমুজ্জ্বল॥
সেইহেতু শ্রীপ্রভুর মঙ্গল-কারণ।
সহায়স্বরূপা হৈল প্রাণ করি পণ॥
মুণ্ডিকা-আসন লাগে প্রথমে প্রথমে।
আরাধনা-পূজা-জপ-ধ্যানের কারণে॥
গঙ্গাহীন প্রদেশের মুণ্ড প্রয়োজন।
শ্রমে যত্ন করিল ব্রাহ্মণী আয়োজন॥
বেদিকা-রচনা দুটি এক বিল্ব-মূলে।
তিন নরমুণ্ড পুতে আসনের তলে॥
পঞ্চবট-মূলে হৈল বেদিকা অপর।
তার তলে পঞ্চ মুণ্ড মৃত্তিকা-ভিতর॥
এই পঞ্চ মুণ্ড নহে কেবল নরের।
পাঁচ মুণ্ড ভিন্ন ভিন্ন বিভিন্ন জীবের॥
পূজা-জপাদিতে এই তন্ত্র-সাধনার।
দুর্লভ দুষ্প্রাপ্য বস্তু যাহা দরকার॥
সে সব ব্রাহ্মণী দিনে সংগ্ৰহ করিয়ে।
রাত্রিতে বেদিকা-ভূমে দেন যোগাইয়ে॥
পুরশ্চরণাদি জপ অঙ্গ সাধনার।
প্রথমত চলে কোন ত্রুটি নাই তার॥
কখন যে আসে দিন কখন যে যায়।
জ্ঞান নাই অতদূর মত্ত সাধনায়॥
প্রধান চৌষট্টিখানা তন্ত্রের ভিতরে।
যতেক সাধনা সব সাঙ্গ পরে পরে॥
যে কোন সাধনা-অঙ্গ করেন আরম্ভ।
দিবসত্রয়ের মধ্যে নিরাপদে সাঙ্গ॥
অনুভূতি দর্শনাদি যোগজ বিকার।
সময়ে কতই হয় সংখ্যা নাই তার॥
একবার হৈল হেন ক্ষুধা উগ্রতর।
খাইলেও সৃষ্টি যেন ভরেনা উদর॥
এইক্ষণে রাশি রাশি যদ্যপি ভক্ষণ।
পরক্ষণে সেই ক্ষুধা হয় জাগরণ॥
কাতরে শ্রীপ্রভুদেব কন ব্রাহ্মণীরে।
সৃষ্টিগ্রাসী ক্ষুধা কিবা উদয় উদরে॥
আশ্বাসিয়া সাধিকা বলেন কিবা ভয়।
সাধনা-সাফল্য-হেতু এরকম হয়॥
তন্ত্রোক্ত উপায় বাবা আছে প্রতিকার।
মথুর-সহায়ে কৈল সঠিক যোগাড়॥
ঘর-পূর্ণ খাদ্যদ্রব্য না হয় গণন।
সাধনাসম্ভূত ক্ষুধা শান্তির কারণ॥
যখন তাহাতে দৃষ্টি পড়িল প্রভুর।
কিঞ্চিৎ খাইলে তার ক্ষুধা হৈল দূর॥