দ্বিতীয় খণ্ড - তান্ত্রিক-সাধনা
১৬
তন্ত্রমতে বীরভাবে সাধনার শেষ।
জীবের কি কথা যেথা সশঙ্ক মহেশ॥
বীরভাবে শ্রীপ্রভুর সাধনা-বারতা।
গাইবার পূর্বে আছে বলিবার কথা॥
স্ত্রীমাত্রেই মাতৃ-জ্ঞান আজন্ম ধারণা।
সতী কি অসতী কিবা বেশ্যা বারাঙ্গনা॥
ভেদাভেদবিরহিত অদ্বৈত-গিয়ান।
এই লক্ষ্যে সাধকের সাধনা-বিধান॥
জন্মাবধি স্বতঃসিদ্ধ পূর্ণজ্ঞান যাঁর।
সাধনে হইতে সিদ্ধ কিবা তাঁর ভার॥
প্রভু যে শ্রীপ্রভুদেব পরম ঈশ্বর।
মায়াতীত মায়াযুক্তে লীলার আকর॥
মায়া নাহি মোহে তাঁরে পুরুষপ্রধান।
শুদ্ধ মনে শুন রামকৃষ্ণলীলা গান॥
ঈশ্বরীয় উদ্দীপনা স্ত্রীমূর্তি দেখিলে।
জৈব-ভাবে কামদৃষ্টি নাহি কোন কালে॥
বিচিত্র ত্যাগের কথা না শুনি কখন।
স্বপনেও নহে কভু প্রকৃতিগ্রহণ॥
বহু জ্ঞান নাহি তাঁর এক জ্ঞান জ্ঞান।
সবে একে একে সব সকলে সমান॥
স্থূল দৃষ্টি নাহি কভু দেখেন অন্তর।
একের অনন্ত মূর্তি সৃষ্টি চরাচর॥
আবিলতা মলিনতা যেন জৈব-ভাবে।
লেশগন্ধ নাহি তার প্রভুর স্বভাবে॥
আমাদের পক্ষে প্রভুদেবে বুঝা ভার।
স্বার্থে কাম রুধিয়াছে দৃষ্টি সবাকার॥
প্রার্থনা করিয়া মুক্ত করহ লোচন।
যাহাতে হইবে কিছু লীলা দরশন॥
বীরভাবে শ্রীপ্রভুর লীলা সাধনার।
পূর্ববৎ ছিল ইচ্ছা নাহি গাইবার॥
কিন্তু এবে দেখিতেছি বিচিন্তিয়া মনে।
হবে মহা অঙ্গহীন শ্রীলীলা-বর্ণনে॥
মহতী মাহাত্ম্য আছে এই সাধনায়।
শুন লীলা-গীত-গাথা পূর্ণ মহিমায়॥
শক্তি অগ্রহণে বীরভাবের সাধনা।
হয় না হবার নয় কখন হবে না॥
তাই কথা গাইবারে পরাণ বিকল।
ধরিলেন মাছ প্রভু না ছুঁইয়া জল॥
একদিন নিশাভাগে হাজির ব্রাহ্মণী।
সঙ্গে ল'য়ে এক পূর্ণ-যুবতী রমণী॥
প্রভুদেবে বলিলেন দেবী জ্ঞান করি।
পূজা করিবার তরে যুবতী সুন্দরী॥
যথা কথা সমাপন সাধনার অঙ্গ।
পশ্চাৎ ব্রাহ্মণী তাহে করিল উলঙ্গ॥
পরে উপদেশে কথা তপস্বিনী বলে।
জপ কর বাবা বসি উলঙ্গার কোলে॥
অভিন্ন জননী-দৃষ্টি প্রভুর আমার।
অঙ্কগত ছেলে যেন কোলে বসে মার॥
একেবারে সমাধিস্থ বাহ্য গেছে ছেড়ে।
ব্রাহ্মণী দেখিয়া ভাসে সুখের সাগরে॥
ভাঙিলে সমাধি কহে আনন্দ অপার।
উঠ বাবা কার্যসিদ্ধি হয়েছে তোমার॥