দ্বিতীয় খণ্ড - হলধারীর সঙ্গে রঙ্গ ও মথুরকে শিবকালী-রূপ-প্রদর্শন
৪
হলধারী একদিন কহে আরবার।
তমোগুণময়ী দেবী কালিকা তোমার॥
তাঁহাকে ভজিলে নাহি হবে কোন ফল।
উন্নতির পথে কাঁটা দিতেছ কেবল॥
বড়ই লাগিল কথা শ্রীপ্রভুর প্রাণে।
বিশেষতঃ আপনার ইষ্টনিন্দা শুনে॥
তখন না কহি কিছু প্রভু গুণমণি।
কালীর মন্দির-মুখে চলিলা অমনি॥
মাতৃগতপ্রাণ প্রভু সজল নয়নে।
কন মাতা অম্বিকায় কাতর বচনে॥
তুই কি তামসী দেবী হলধারী কয়।
শেলের সমান কথা প্রাণে নাহি সয়॥
সত্য তত্ত্ব কহ মোরে স্বরূপ তোমার।
বুঝাইয়া দিলা শ্যামা ছাওয়ালে তাঁহার॥
মায়ের বচন শুনি হ'য়ে উল্লসিত।
দাদার সম্মুখে ত্বরা হইল উপনীত॥
তখন বসিয়ে দাদা পূজার আসনে।
বিষ্ণুর মন্দিরে বিষ্ণুপূজার কারণে॥
সম্মুখেতে পুঞ্জীকৃত পূজোপকরণ।
নৈবেদ্যাদি ফল মূল কুসুম চন্দন॥
স্কন্ধে তাঁর আরোহণে বসিলা ঠাকুর।
রুষিয়া গর্জিয়া কন সম্মুখে বিষ্ণুর॥
কি বুঝিয়া কহ মাকে তামসী কালিকা।
মা আমার সর্বেশ্বরী জগতপালিকা॥
সৃষ্টিস্থিতিলয়-কর্মে ত্রিগুণধারিণী।
গুণাতীতে তিনি পূর্ণব্রহ্ম-সনাতনী॥
ভাবাবিষ্ট ঠাকুরের স্কন্ধে আরোহণে।
দাদার চৈতন্যোদয় পরশের গুণে॥
স্বীকার করিল তবে প্রভুর বচন।
প্রভুতে কালিকাবেশ করে দরশন॥
সম্মুখস্থ কুসুমাদি চন্দনে মাখিয়ে।
প্রভুর শ্রীপদে দেয় অঞ্জলি ভরিয়ে॥
ভাবাবেশ-ভঙ্গে প্রভু ফিরিলা স্বস্থানে।
আমূল বৃত্তান্ত হৃদু শুনিলেন কানে॥
কিছুক্ষণ পরে তবে হৃদয় বিস্মিত।
হলধারী যেথা তথা হয় উপনীত॥
শ্রুত ঘটনাদি যত কহিল তাঁহাকে।
তবে কেন বল পেয়েছে ভূতে মামাকে॥
তদুত্তরে হলধারী হৃদয়েরে কন।
গদায়ের ঈশ্বরাবেশ কৈনু দরশন॥
কালীর মন্দিরে আমি যে সময়ে যাই।
জানি না আমায় কিবা করেন গদাই॥
বুঝিতে না পারি কিছু করিয়া বিচার।
এ অতি বিচিত্র কাণ্ড বিচিত্র ব্যাপার॥
কতই মা কৈল খেলা লীলার প্রাঙ্গণে।
শ্রীপ্রভুর লীলারঙ্গ শ্রীপ্রভুই জানে॥