দ্বিতীয় খণ্ড - যোগ-সাধন
২
এবে শুন বর্তমানে গুরুর বারতা।
লীলারস-পরিপূর্ণ রগড়ের কথা॥
যোগসাধনার চিন্তা হয় দিবানিশি।
হাজির এহেন কালে জনৈক সন্ন্যাসী॥
হেথা কিবা প্রয়োজন এখানে কেমনে।
উদ্দেশ্য যাইবে গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে॥
অতিথিশালায় তাই পুরীর ভিতর।
অদ্ভুত প্রভুর সঙ্গে মিলন-খবর॥
একদিন প্রভুদেব শ্যামার মন্দিরে।
পূর্বমুখে সমাসীন প্রতিমা-গোচরে॥
ভাবের আবেশভরে দেখিবারে পান।
নামিয়া গঙ্গায় এক সাধু করে স্নান॥
কৃতকর্ম যোগিবর তেজঃপুঞ্জকায়।
প্রাচীন বয়স জটাসম্ভার মাথায়॥
কৌপীন নাহিক নেংটা উলঙ্গ-আচারী।
যোগিজন-অগ্রগণ্য নাম তোতাপুরী॥
তোতায় দেখিয়া তাঁর বড় খুশী মন।
অতিথিশালায় দুঁহে হৈল সংমিলন॥
তোতাও তেমতি প্রীত প্রভুদেবে হেরে।
বাসনা প্রভুর সঙ্গে আলাপন করে॥
মনোমত মূর্তি শক্তি গায়ে করে খেলা।
মনে সাধ পায় যদি করে তাঁর চেলা॥
তাই বলে প্রভুদেবে প্রফুল্লবদন।
কি বাচ্চা করিবে কিছু সাধনভজন॥
উত্তরবচনে প্রভু বলিলেন তাঁকে।
পশ্চাৎ কহিব কথা জিজ্ঞাসিয়া মাকে॥
মাতৃগতপ্রাণ প্রভু জিজ্ঞাসিতে মায়।
চলিলা মন্দিরমধ্যে প্রতিমা যেথায়॥
বালকের চেয়ে প্রভু বালক সরল।
যতেক ঘটনা মায়ে কহিলা সকল॥
বালকবৎসলা মাতা অতি তুষ্ট মনে।
দিলা আজ্ঞা ভাবাতীত অরূপ সাধনে॥
সেই সঙ্গে সমাগত সন্ন্যাসীর কথা।
আমূল জীবনে তার যতেক বারতা॥
সাধনার পথে কতদূর আগুয়ান।
এখানে কেমনে এবে কিবা তার নাম॥
মনোমত দ্রব্য পেয়ে মায়ের সকাশে।
বালক যেমন মহা-আনন্দেতে ভাসে॥
তেমনি আনন্দমতি প্রভুদেব রায়।
পালটিয়া চলিলেন অতিথিশালায়॥
আগ্রহে সন্ন্যাসিবর উপবিষ্ট যেথা।
গিয়াই বলেন নাম তোমারই কি তোতা॥
বিস্ময়ে পূর্ণিতান্তর তোতা ভাবে মনে।
আমার যে তোতা নাম জানিল কেমনে॥
এদেশে কাহারও সঙ্গে নাই জানাশুনা।
ত্রিরাত্রির বেশী কোথা কভু নহে থানা॥
এ তীর্থে ও তীর্থে অবিরত ভ্রাম্যমাণ।
কেমনে পাইল বাচ্চা নামের সন্ধান॥
যোগসিদ্ধ যোগিবর সবিস্ময় মন।
বলিলেন পরে প্রভু করিব সাধন॥
তোতা কহে তিন দিন মাত্র আমি রব।
তীর্থপর্যটনে ঘুরি তীর্থান্তরে যাব॥
সুকৌশলী প্রভু যেন হেন আর কোথা।
সর্বদা তোতার সঙ্গে অরূপের কথা॥
আহার বিরাম নাই এত মত্ততর।
সপ্তাহ চলিয়া যায় নাহিক খবর॥
প্রভুকে পাইয়া তোতা মহাতোষ পায়।
তীর্থগমনের কথা না আসে মাথায়॥
ত্রাসিতা ব্রাহ্মণী হেথা শুনিয়া বারতা।
বেদান্ত-সাধনে শ্রীপ্রভুর ব্যাকুলতা॥
মিষ্টভাষে প্রভুদেবে করে নিবারণ।
অরূপ-সাধনে আছে কিবা প্রয়োজন॥
কখন না কর হেন ইহাতে কি কাজ।
শক্তি-প্রতিবাদী ভক্তিহীন যোগিরাজ॥
বিশুষ্ক জ্ঞানের কাণ্ডে ভক্তি হয় ক্ষয়।
যথাতত্ত্ব ব্রাহ্মণী কহিল সমুদয়॥
কোন কথা ব্রাহ্মণীর না হয় শ্রবণ।
সন্ন্যাস লইয়া সাধ ব্রহ্মের সাধন॥