Prev | Up | Next

দ্বিতীয় খণ্ড - যোগ-সাধন

মায়ের পরানধন প্রভু গদাধর।
সংসারে বিরাগহেতু চিন্তা নিরন্তর॥
সন্ন্যাসগ্রহণ-কথা যদি ঢুকে কানে।
শেলের সমান ব্যথা লাগিবে পরানে॥
এতেক বুঝিয়া প্রভু যোগিবরে কন।
সংগোপনে করিবেন সন্ন্যাস গ্রহণ॥
কারণ হইয়া জ্ঞাত যোগিবর খুশী।
বেশ বলি দিল সায় ব্রহ্মজ্ঞ সন্ন্যাসী॥
গোপনে গ্রহণ কৈলে নাহি কিছু হানি।
শুভদিন নির্ধারিত হইল তখনি॥
দীক্ষাকাণ্ডে নানাবিধ দ্রব্য প্রয়োজন।
বিধানানুমত শ্রাদ্ধ হোমের কারণ॥
আয়োজন সর্বাঙ্গীণ হইল সকল।
শুভক্ষণহেতু দুয়ে সতত বিকল॥
বিকলতা শ্রীপ্রভুর স্বতঃ স্বাভাবিক।
শিষ্যপ্রেমে মুগ্ধ তোতা তা হ'তে অধিক॥
শ্রীঅঙ্গেতে সুলক্ষণ প্রত্যক্ষ বিরাজ।
যাহে বিমোহিত-চিত এত যোগিরাজ॥
শুভদিন সমাগত দীক্ষা-অঙ্গ শেষ।
পরে সাধনাঙ্গে দিলা বিধি-উপদেশ॥
নামরূপ রাজ্য থেকে গুটাইয়া মন।
ভাবাতীতে গুণাতীতে করিতে মিলন॥
আজীবন শ্রীপ্রভুর ভাবরাজ্যে বাস।
ভাবময়ী জগমাতা চরণে প্রয়াস॥
মহোল্লাস ভাবেশ্বরী মায়েরে দেখিয়ে।
মন নাহি চায় যেতে তাঁহারে ছাড়িয়ে॥
যেখানেতে ভাবাতীত ব্রহ্মের বিহার।
দেশকালহীন রাজ্য শূন্য একাকার॥
কাজেই আসেন বাহ্যে ফিরিয়ে ফিরিয়ে।
তা দেখি ব্রহ্মজ্ঞ গুরু উঠে গরজিয়ে॥
সুচামের বিদ্ধ ভূমি অণুর ভিতর।
প্রবেশিয়া দাও মন করি সূক্ষ্মতর॥
প্রাণপণে প্রভু পুনঃ বসিলা ধিয়ানে।
ক্রমে উপনীত ভাবময়ীর ভুবনে॥
নিরুপমা মূর্তি মার নয়নগোচর।
জ্ঞান-অসি দিয়া রূপ কাটিলা সত্বর॥
রূপ নষ্টে দ্রুতগতি ধাবমান মন।
সমরস হয়ে ব্রহ্মে হইল মিলন॥
দীক্ষাগুরু ব্রহ্মবাদী নিকটে বসিয়ে।
শিষ্যের অবস্থা দেখে বিশেষ করিয়ে॥
নির্বিকল্প সমাধির যতেক লক্ষণ।
সুস্পষ্ট শ্রীঅঙ্গে করে সব নিরীক্ষণ॥
তথাপি সন্দেহ তাঁর বার বার মনে।
চল্লিশ বৎসর গতে সিদ্ধ যে সাধনে॥
এখানে কেমনে তাহা একদিনে হয়।
ব্রহ্মজ্ঞ না পারে কিছু করিতে নির্ণয়॥
সন্দেহমোচনে পুনঃ বসে পরীক্ষায়।
পূর্ববৎ লক্ষণাদি দেখিবারে পায়॥
তখন অর্গলবদ্ধ করিয়া দুয়ারে।
প্রহরিস্বরূপ গুরু রহিল বাহিরে॥
একদিন দুইদিন তিনদিন গেল।
তথাপি প্রভুর সাড়া-শব্দ না পাইল॥
তখন কুটীরে গিয়া দেখিল গোস্বামী।
যে ভাবে প্রথমে দেখা এখন তেমনি॥
প্রাণের সঞ্চার দেহে নহে অনুমান।
ভিতরের বায়ু-রোধ জড়ের সমান॥
আসনস্থ দেহখানি অটল অচল।
শ্রীবদনে ভাতে জ্যোতি অতীব উজ্জ্বল॥
সমাধি করিতে ভঙ্গ যে ক্রিয়ার বিধি।
তাই আচরিয়া এবে ভাঙায় সমাধি॥

Prev | Up | Next


Go to top