দ্বিতীয় খণ্ড - মধুরভাবে সাধনা
১০
ব্রাহ্মণী উন্মত্তা এবে প্রভুর কৃপায়।
নানা ভাব-বেগ হৃদে স্রোত ব'য়ে যায়॥
যখন যে ভাব হৃদে হয় জাগরণ।
সেইমত হয় তার বাহ্য আচরণ॥
যখন বাৎসল্যভাব হৃদয়ে সঞ্চার।
প্রভুরে দেখিত ঠিক গোপাল তাঁহার॥
ভিক্ষা মাগিবার তরে ঘরে ঘরে যায়।
গোপাল গোপাল বলি কাঁদে উভরায়॥
ভিক্ষা-লব্ধ বিনিময়ে মাখন নবনী।
আনিয়া প্রভুর মুখে দিতেন ব্রাহ্মণী॥
স্নেহে গরগর হৃদি মুখপানে চায়।
কাছে রহে নাহি ইচ্ছা যাইতে কোথায়॥
ভিক্ষায় না গেলে নয় তাই হয় যেতে।
নবনী ছানার হেতু প্ৰভুরে খাওয়াতে॥
গোঠেতে আটক বৎস গাভীর মতন।
ব্রাহ্মণীর কোনখানে নাহি থাকে মন॥
বিরহের গান গায় বিষম উচ্ছ্বাসে।
চক্ষে ঝরে জলধারা বক্ষঃ যায় ভেসে॥
এমন হৃদয়-দ্রব ঠামে গীত গায়।
মানুষ দূরের কথা পাষাণে গলায়॥
কেঁদে কেঁদে যায় ভেসে সুখের সাগরে।
বলিতে নারিনু কিবা ব্রজভাবে ধরে॥
প্রেম-ভক্তি-অনুরাগ সুদুর্লভ ধন।
কোটির মধ্যেতে যদি পায় এক জন॥
বৃথায় জনম বৃথা নরদেহ ধরা।
কৃষ্ণ-অনুরাগে যদি না হইল হারা॥
ব্রহ্মার বাঞ্ছিত ধন প্রভু-অবতারে।
অহেতুক কৃপানিধি দিল মুঠা ভ'রে॥
মানিক রতন নিধি মণি যার নাম।
যে না চিনে তার কাছে আছে কিবা দাম॥
কামিনীকাঞ্চনাসক্ত বদ্ধ জীবগণ।
বুঝে কৃষ্ণভক্তি তুচ্ছ তৃণের মতন॥
প্রেমভক্তি-আস্বাদনে কিবা মিঠা লাগে।
কি তার সুতার ভরা আছে অনুরাগে॥
আদতেই বোধ নাই আসক্তির প্রাণে।
সন্তুষ্ট বিষের কীট হলাহলপানে॥
গুরুবাক্য মহামন্ত্র হৃদয়ের ক্ষেতে।
কৃপায় জগৎ-গুরু দেন যার পুঁতে॥
আঁতে আঁতে গাঁথে তার বেড়াজাল মূল।
বীজমন্ত্র দেয় তুলে অঙ্কুর অতুল॥
পুষ্টি-হেতু চারাগাছে দুখানি নয়ন।
ধীরে ধীরে মূলে করে বারি বিসিঞ্চন॥
মজার রসের গাছ রসে রসে বাড়ে।
প্রসারি প্রশাখা-শাখা ত্রিভুবন বেড়ে॥
লোকে জানে হৃদিক্ষেত অল্প-আয়তন।
অলীক সে কথা তার মধ্যে ত্রিভুবন॥
আঁখি ঢালে তত জল যত টানে মূল।
ডগে ডগে ফুটে বিশ্ব-বিনোদিনী ফুল॥
আকুল পরাণ এত সৌরভের বল।
গাছের যে কাছে যায় সে হয় পাগল॥
বিশ্বগন্ধা কুসুমের কর্ণিকা ভিতরে।
অনুরাগ ভক্তি প্রেম তিন ফল ধরে॥
তিন রূপ ফল কিন্তু এক আস্বাদন।
এক আস্বাদনে তবু বিবিধ রকম॥
বিষম হেঁয়ালি মন কি দিব বুঝায়ে।
আগাগোড়া ইক্ষুগাছা গোটা দেখ খেয়ে॥
বড়ই সুন্দর গাছ কিবা কব তার।
মূলে ডগে চলে বেগে রসের জুয়ার॥
কখন গম্ভীর স্থির ফুলপত্র পোষে।
কখন হইয়া ফল ফলসঙ্গে মিশে॥
অনুরাগে বেগবতী থামে ভক্তি হ'লে।
সাগরসঙ্গমে প্রেম সঙ্গে যায় মিলে॥
প্রেমে রসে মিশে গেছে ব্রাহ্মণী এখন।
শুন রামকৃষ্ণকথা মঙ্গলকথন॥